কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

বাংলাদেশের সাংবিধানিক ক্রমবিকাশ: জনগণের আশায় গুড়ে বালি

বাংলাদেশের সাংবিধানিক ক্রমবিকাশ: জনগণের আশায় গুড়ে বালি

বাংলাদেশের আপামর জনসাধারণ, ১৯৭১ সালে জাতীয় মুক্তির জন্য দীর্ঘ ৯ মাসের ঐতিহাসিক সংগ্রামের মধ্য দিয়ে একটি সফল গণ বিপ্লবের মাধ্যমে, স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা করেছে। সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের চেতনাবোধ আমাদের বীর জনতাকে জাতীয় মুক্তির সংগ্রামে আত্মনিয়োগ ও প্রাণোৎসর্গ করতে উদ্বুদ্ধ করেছিলো।

প্রায় ২০০ বছরের সুদীর্ঘ আন্দোলন-সংগ্রাম আর আত্মত্যাগের মাধ্যমে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসকদের বিতাড়নের পর বাংলাদেশের জনগণ পুনরায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর শোষণ ও উৎপীড়নের মুখে নিপতিত হয়। আন্দোলন-প্রতিবাদ, মিছিল আর বিক্ষোভে কেটে যায় আরো প্রায় ২৫ বছর। এ দীর্ঘ সময়ে বাঙালি জাতির আন্দোলন-সংগ্রামের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলো শাসনতান্ত্রিক অধিকার ও সংস্কার। বাঙালিরা চেয়েছিলো- পাকিস্তানে এমন একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক শাসনতন্ত্র/সংবিধান হবে যেখানে তাঁদের রাজনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও অর্থনৈতিক স্বাতন্ত্র্যের স্বীকৃতি থাকবে। কিন্তু সে স্বীকৃতি মেলেনি পাকিস্তান আমলের কোন সংবিধানেই। বাঙালিদের শাসনতান্ত্রিক অধিকার আদায়ের আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৭১ সালে বাঙালি জাতি নিজেরাই নিজেদের স্বাধীনতা ঘোষণা করে, বিশ্ব বুকে নজিরবিহীনভাবে একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম দেয়। একটি সদ্য স্বাধীন দেশের মানুষ তাই শোষণ, বঞ্চনা ও বৈষম্য থেকে মুক্তির পথ-পরিক্রমা খুঁজতে থাকে। তারা চেয়েছে এমন একটি সমাজ গড়তে যেখানে সকল নাগরিকের জন্য আইনের শাসন, মৌলিক মানবাধিকার এবং রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক সাম্য, স্বাধীনতা ও সুবিচার নিশ্চিত হবে।

একটি পূর্ণ স্বাধীন সত্তায় সমৃদ্ধি লাভ করতে এবং মানবজাতির প্রগতিশীল আশা-আকাঙ্খার সাথে সঙ্গতি রেখে আন্তর্জাতিক শান্তি ও সহযোগিতার ক্ষেত্রে পূর্ণ ভূমিকা পালন করতে স্বাধীন দেশের রূপরেখা দিতে প্রণীত হয় বাংলাদেশের প্রথম পূর্ণাঙ্গ সংবিধান। ১৯৭২ সালের ৪ নভেম্বর গণপরিষদে এই সংবিধান চূড়ান্তভাবে গৃহীত হয়। কিন্তু স্বাধীনতা পরবর্তীকালে গঠিত সব সরকারই তাঁদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করতে গিয়ে বারংবার সংবিধান রদবদল করে ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়েছে গণমানুষের স্বপ্ন। ১৯৭১ সালের পর থেকে অদ্যাবধি বাংলাদেশের সরকার ব্যবস্থা কমপক্ষে পাঁচবার বদলেছে। সকলেই তাঁদের ক্ষমতার ভিত মজবুত করে শাসনকে নিরবিচ্ছিন্ন করতে সংবিধান কে যথেচ্ছভাবে পরিবর্তন করেছে। এমনকি, স্বাধীনতার স্থপতিরাও মাত্র তিন বছরের মাথায় সংবিধানকে আমূল পরিবর্তন করে, সকল সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে পঙ্গু করে, দেশটাকে অচল করে দিয়েছিলেন। রাজনীতিবিদদের অপরিণামদর্শী ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্তের ফলে সৃষ্ট পরিস্থিতিতে দেশে অসাংবিধানিক শাসনব্যবস্থার সূত্রপাত ঘটে, যার বলি হয়েছে দেশের সাধারণ মানুষ। অস্থিতিশীল রাজনীতি ও শাসনব্যবস্থার কারণে ব্যাহত হয়েছে দেশের স্বাভাবিক উন্নয়ন-অগ্রগতির ধারা। ৯০-এর দশকের শুরুর দিকে দেশে সুষ্ঠ নির্বাচন ও নিয়মতান্ত্রিক ক্ষমতার পালাবদলের যে পদ্ধতি চালু হয়েছিলো তাকেও বিচার বিভাগের উপর ভর করে বিনাশ করে দিয়েছেন আমাদের রাজনীতিবিদরা। তারপর, নির্বাচন ও ক্ষমতা হস্তান্তর নিয়ে সৃষ্ট সাংবিধানিক সংকট থেকে উত্তরণের কোন পথ আজও খুঁজে বের করতে পারেনি ক্ষমতাসীনরা। দেশে শুরু হয়েছে ভোটাধিকার হরণ ও ভোটারবিহীন একচেটিয়া নির্বাচনের ধারা সেইসাথে একতরফা ও স্বৈরতান্ত্রিক ধারার শাসনব্যবস্থা।

স্বাধীনতা পরবর্তী এ দীর্ঘ সময়ে ক্ষমতাসীনরা নিজেদের কাঙ্ক্ষিত উন্নতি সাধন করলেও জনসাধারণের মাঝে সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সংবিধানে প্রদত্ত লক্ষ্য মাত্রা অর্জন করতে পারেনি কেউই। স্বাধীনতার ৫০ বছরেও রাজনীতিতে তৈরি হয়নি কোন সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলিত ধারা। এখানে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে ক্ষমতাসীন আর বিরোধীদের রাজনৈতিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, প্রতিহিংসা ও জিঘাংসার সংস্কৃতি। ক্ষমতাসীনদের রক্তচক্ষুর ভয়ে মেরুদণ্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারেনি নির্বাচন কমিশনসহ কোন সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। স্বাধীন বিচার বিভাগের প্রতি ক্ষমতাসীনরা সবসময়েই ছিলেন খড়গহস্ত। কখনোবা ক্ষমতাসীনরা তাঁদের ধারাবাহিক দুঃশাসন কে কিছু চোখ ধাঁধালো বৈষয়িক উন্নতির মহড়া দিয়ে ঢাকার চেষ্টা করেছেন। যেখানে মানুষের নীতি-নৈতিকতার অবক্ষয়, সমাজের অপরাধ প্রবণতা, নিরাপত্তাহীনতা, শঙ্কা ও অভাব দিনদিন বেড়েই চলেছে, সেখানে ইতিহাসের দোহাই আর উন্নয়নের বুলি দিয়ে দেশের শেষ রক্ষা হবে না। স্বাধীনতার ৫০ বছরে উপনীত হয়ে, এ অবস্থায় দেশ আর চলতে পারে না। তাই জাতীয় অগ্রগতিতে সুস্থ ধারায় সংবিধান চর্চা ও সাংবিধানিকতার বিকাশ অপরিহার্য হয়ে উঠেছে।

বাংলাদেশের মানুষ অত্যন্ত রাজনীতি সচেতন। তারা সব রকম রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করে। সাধারণ মানুষের ভোটের অধিকার রাজনীতিতে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ নিশ্চিত করে। জনগণের ভোটাধিকার হরণ, প্রভাবশালী রাজনীতিবিদদের দুর্বৃত্তায়ন ও দুর্নীতিপরায়ণতা সাধারণ মানুষকে মর্মাহত করেছে। বাংলাদেশের সংবিধানের অনুচ্ছেদ ১১ তে– ‘প্রশাসনের সকল পর্যায়ে নির্বাচিত প্রতিনিধিদের মাধ্যমে জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ নিশ্চিত’ করার কথা বলা আছে৷ যা সংবিধানে বর্ণিত গণতন্ত্রের সার কথা। অর্থাৎ জনগণের কার্যকর অংশগ্রহণ ব্যতীত কোন প্রতিনিধি হতে পারে না; এবং এই প্রতিনিধিরা অবশ্যই ‘নির্বাচিত’ হবেন। অথচ, আজকের বাস্তবতা হলো– নির্বাচনের আয়োজন করলে সেটা হয় ভোটারবিহীন আবার কোথাও বিনা নির্বাচনেই নির্ধারিত হয়ে যাচ্ছেন জন প্রতিনিধিরা। বর্তমান ক্ষমতাসীনদের বাহ্যিক আচরণ ও কর্মকাণ্ডে এটি প্রতীয়মান হয় যে, তারা চাচ্ছে দেশে আর কোন রাজনৈতিক দল নির্বাচনে না আসুক, কেউই নির্বাচনে প্রার্থী না হোক, যেন দেশে বিরোধী দলহীন রাজনীতি অথবা একদলীয় গণতন্ত্র স্থায়ী রূপ লাভ করে। অথচ, আমাদের দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর নিবন্ধন সংক্রান্ত আইন– ১৯৭২ সালের গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশে বলা হয়েছে– যেসব রাজনৈতিক দলের লক্ষ্যই হলো দলহীন বা একদলীয় ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করা তারা নিবন্ধন যৌগ্য নয়। তাই, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের নিবন্ধনও বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছে। তবে বাতিল করবে যে প্রতিষ্ঠান (নির্বাচন কমিশন) সেটাও হয়তো সরকারের রোষানলে পড়ে ব্যর্থতার দায়ে বাতিল হয়ে যেতে পারে অচিরেই।

এ অবস্থায় একমুখী ও কর্তৃত্ববাদী শাসনের কবল থেকে গণমানুষকে রক্ষা করতে গণমানুষের কল্যাণে একটি গণ বিপ্লবের ভিত রচনা করতে হবে। বিপ্লব পরবর্তী বাস্তবতায় নতুন সাংবিধানিক কাঠামোয় সাজাতে হবে এ দেশকে। জাতীয় ঐক্য ও সংহতির সোপান রচনা করতে গণমানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য নেতৃত্ব চয়ন করে, বিদ্যমান রাজনৈতিক বলয়ের বাইরে গিয়ে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তি গঠন করা অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনি এক সময়ে, রাজনীতিতে লেগেছে হাতপাখার বাতাস। গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে দেশের সর্বত্রই লেগেছে হাতপাখার ছোঁয়া। নব উদ্যমে জেগে উঠছে মানুষ। নতুন স্বপ্ন বুনছে তারা ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশকে নিয়ে। মানুষ আস্থা পাচ্ছে তাঁদের অবিচল ও আপোষহীন নেতৃত্বে। নতুন সম্ভাবনার দ্বার খুলছে। আমরা প্রহর গুনছি গণ বিপ্লবের।

লেখক : ইমতিয়াজ আহমাদ
কেন্দ্রীয় আন্তর্জাতিক সম্পাদক
ইসলামী যুব আন্দোলন বাংলাদেশ
সেশন : ২০২৩-২৪

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *

Scroll to Top

সদস্য হতে ফরমটি পূরণ করুন


ইসলামী যুব আন্দোলন-এ যোগদান করতে চাইলে এই ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন।

প্রশ্ন করুন…

ইসলামী যুব আন্দোলন সম্পর্কে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

যোগাযোগ তথ্য

সদস্য ডাটা এন্ট্রি

শাখা কর্তৃক নবাগত সদস্যদের নিন্মোক্ত ফরমের মাধ্যমে পূরণ করে পাঠাতে হবে

বর্তমান ঠিকানা
স্থায়ী ঠিকানা