কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

উম্মুল মুমিনিন হজরত খাদিজা রা.

নাম ও বংশ
উম্মুল মুমিনীন হযরত খাদিজা রা. ছিলেন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর প্রথম এবং সবচেয়ে মর্যাদাবান সহধর্মিনী। সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণকারীও ছিলেন তিনি। তাঁর প্রকৃত নাম খাদিজা, উপনাম ছিল উম্মু হিন্দ, উপাধি তাহিরা। বংশপরিক্রমা যথাক্রমে খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ, ইবনে আসাদ, ইবনে আবদুল উয্যা, ইবনে কুসাই। কুসাই পর্যন্ত গিয়ে নবীজি ও আম্মাজান খাদিজা রা.-এর বংশ একই পরম্পরায় মিলিত হয়েছে। এজন্য তাঁকে আল-কুরাইশী আল-আসাদীও বলা হয়। পিতা খুয়াইলিদ ছিলেন স্বগোত্রের একজন মর্যাদাবান ব্যক্তি। মাতা ফাতিমা বিনতে জায়েদা; যিনি লুয়াই ইবনে গালিবের দ্বিতীয় পুত্র আমেরের সন্তান। হস্তীবাহিনীর ঘটনা সংঘটিত হওয়ার ১৫ বছর পূর্বে তাদের ঘর আলোকিত করে জন্ম নেন আম্মাজান খাদিজা রা.। তিনি ছিলেন অত্যন্ত উন্নত চরিত্রের একজন সম্ভ্রান্ত নারী। বোধশক্তি হওয়ার পরপর-ই নিজের নিষ্কলুষ চরিত্রের কারণে তিনি তাহেরা তথা পবিত্র নারী উপাধিতে খ্যাতিলাভ করেন।

বিবাহ
আম্মাজান হযরত খাদিজা রা. এর নিষ্কলুষ চরিত্রের প্রতি লক্ষ রেখে পিতা খুয়াইলিদ চেয়েছিলেন তাঁকে তাওরাত ও ইঞ্জিলের বড় আলেম স্বীয় ভাতিজা ওয়ারাকা ইবনে নাওফেলের সঙ্গে বিয়ে দিতে। কিন্তু কোনো কারণে তা আর হয়ে ওঠেনি। বিবাহ হয়েছিল আবু হালাহ ইবনে যিরারাহ ইবনুন নাবাশ আত্-তামিমির সাথে। তিনি ছিলেন তৎকালীন আরবের অন্যতম সম্ভ্রান্ত ব্যক্তি। এই ঘরে হিন্দ ও হালাহ নামীয় দু’ সন্তান জন্ম নেয়। এর মধ্যেই বিখ্যাত ফিজার যুদ্ধের আগুন ছড়িয়ে পড়ে। খাদিজা রা.-এর পিতা-স্বামীও সেখানে শরিক হয়ে নিহত হন। ঘটনাটি ঘটেছিল মক্কায় হস্তীবাহিনী আক্রমণের ২০ বছর পূর্বে। আবূ হালাহ এর মৃত্যুর পর ‘আতীক ইবন ‘আইয ইবন ‘উমার ইবন মাখযূম এর সাথে দ্বিতীয় বিয়ে সংঘটিত হয়। এই ঘরে জন্ম নেয় হিন্দ বিনতে ‘আতীক।

ব্যবসা
তৎকালীন মক্কার বিখ্যাত ব্যবসায়ীদের মধ্যে আম্মাজান হযরত খাদিজা রা. ছিলেন অত্যন্ত সমাদৃত। আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও তাঁর ব্যবসার ব্যপ্তি ছড়িয়ে পড়েছিল। কিন্তু পিতা ও স্বামীর মৃত্যুর পর ব্যবসা দেখভাল করার মতো আর কেউ না থাকায় আত্মীয়দের মধ্য থেকে অভিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গ আম্মাজান খাদিজা রা. এর নিকট এসে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ব্যবসায়িক কাজে নিযুক্ত হতে চাইতেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উত্তম আচরণ, লেনদেন, সততা, আমানতদারিতা এবং পবিত্র চরিত্রের কথা সর্বজনবিদিত হওয়ার সুবাধে একমাত্র তাঁকেই তিনি স্বেচ্ছায় ব্যবসায় যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব করেন। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘আপনি আমার ব্যবসায়িক পণ্য নিয়ে শামে যান। অন্যকে যা দিই, বিনিময় হিসেবে আপনাকে তার দ্বিগুণ দেব।’ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও এ প্রস্তাব সাদরে গ্রহণ করেন। পণ্য নিয়ে খাদিজা রা. এর গোলাম মাইসারাসহ রওনা হয়ে যান শামের পথে। আল্লাহর রহমতে সে বছরের লভ্যাংশ বিগত সকল বছরের রেকর্ড ছাড়িয়ে গিয়েছিল।

নবীজির সঙ্গে বিয়ে
ধন-দৌলত এবং উন্নত চরিত্রের কারণে খাদিজা রা. ছিলেন কুরাইশদের নিকট মর্যাদাশীল নারী। প্রত্যেক পুরুষ তাকে বিবাহ করার তামান্না রাখলেও কুদরতের ফায়সালা ছিল ভিন্ন কিছু। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যবসা শেষে শাম থেকে ফিরে এলে দাসী মাইসারা পুরো সফরের আদ্যপান্ত বিশেষত নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর চারিত্রিক পবিত্রতা, আমানতদারিতা ও বারাকাহ সম্পর্কে খাদিজা রা. কে অবহিত করেন। এতে মুগ্ধ হয়ে আম্মাজান নিজেই তাঁকে বিয়ের পয়গাম দেন। প্রস্তাব নিয়ে যান তার বান্ধবী এবং দুধবোন নাফিসা বিনতে মুনাব্বিহ। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার প্রস্তাব গ্রহণ করলে বিবাহের দিন-তারিখ ধার্য হয়। খাদিজা রা.-এর পিতা বেঁচে না থাকলেও জীবিত ছিলেন চাচা আমর ইবনে আসাদ। কিন্তু তৎকালীন আরবে নিজের বিবাহ-শাদি নিয়ে নারীদের কথা বলার স্বাধীনতা ছিল বিধায় চাচার উপস্থিতি সত্ত্বেও নিজে নিজেই বিবাহের সবকিছু সম্পন্ন করেছিলেন তিনি।

নির্ধারিত তারিখে নবীজির চাচা আবু তালেব এবং হামজাসহ গোত্রের গণ্যমান্য ব্যক্তিরা খাদিজা রা.-এর গৃহে যান। আম্মাজান খাদিজা রা.-ও তাঁর খান্দানের কয়েকজন সম্মানিত ব্যক্তিকে আমন্ত্রণ জানান। আবু তালেব বিবাহের খুতবা পাঠ করেন। আমর ইবনে আসাদের পরামর্শে মোহর নির্ধারণ হয় পাঁচশো দিরহাম। অবশেষে খাদিজা রা. নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনসঙ্গিনী হয়ে অধিষ্ঠিত হন উম্মুল মুমিনিনের মর্যাদায়। সেসময় নবীজির বয়স ছিল পঁচিশ বছর, আর আম্মাজান খাদিজা রা.-এর বয়স ছিল চল্লিশ। নবীজির সাথে তার শুভপরিণয়ের এ ঘটনা সংঘটিত হয়েছিল নবুওয়াতের পনেরো বছর পূর্বে।

আম্মাজান খাদিজা রা.-এর গর্ভ থেকে বিশ্বনবীর ঔরসে জন্ম নিয়েছেন দুজন পুত্রসন্তান এবং চারজন কন্যাসন্তান; পুত্র দু’জন শৈশবেই ইন্তেকাল করেন। এ পর্যায় আমরা উক্ত ছয় সন্তানের সংক্ষিপ্ত পরিচয় তুলে ধরছি:
১. কাসিম। তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ সন্তান। তাঁর নামেই নবীজির উপনাম ‘আবুল কাসিম’ প্রসিদ্ধি পেয়েছে। শৈশবেই তিনি মক্কাতে ইন্তেকাল করেন। বলা হয়, সেসময় তিনি হাঁটতে পারতেন।
২. যায়নাব। নবীজির কন্যাগণের মধ্যে তিনি ছিলেন জ্যেষ্ঠ।
৩. আবদুল্লাহ। অল্প ক’দিন বেঁচে ছিলেন। নবীজির নবুওয়াতলাভের বছর জন্মগ্রহণ করেছিলেন বলে তাকে তায়্যিব এবং তাহির উপাধি প্রদান করা হয়েছিল।
৪. রুকাইয়া।
৫. উম্মে কুলসুম।
৬. ফাতিমা জাহরা।
বয়সের দিক থেকে ছয় ভাইবোনের মধ্যে ছিল এক বছরের পার্থক্য। আম্মাজান খাদিজা ছিলেন তাঁর সন্তানদের কাছে খুব প্রিয়। তবে সম্পদশালী ছিলেন বিধায় তিনি সন্তানদের দেখাকোনোার দায়িত্ব দিয়েছিলেন উকবার দাসী সালমার কাঁধে। সালমা তাদের সাথে খেলাধুলা করতেন; তাদেরকে দুধ পান করাতেন।

ইসলাম গ্রহণ
পনেরো বছর পর নবুওয়াতপ্রাপ্ত হলে নবীজি তার দায়িত্ব পালনের অংশ হিসেবে সর্বপ্রথম আম্মাজান খাদিজাকে দীনের দাওয়াত দেন। খাদিজা রা. তো আগে থেকেই সবকিছু বিশ্বাস করতেন; কারণ নবীজির সততা ও নবুওয়াতের সত্যতার ব্যাপারে তার চেয়ে তো বেশি কারোর জানা থাকার কথা নয়। সহিহ বুখারির ‘ওহির সূচনা’-সংক্রান্ত অনুচ্ছেদে এ ঘটনাটি বিস্তর বিবৃত হয়েছে। পাঠক-সমীপে আমরা পূর্ণ বর্ণনাটি হুবহু তুলে ধরছি:

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে ওহির সূচনা হয়েছিল সত্য স্বপ্নের মাধ্যমে। তিনি যে স্বপ্নই দেখতেন, তা প্রভাতের জ্যোতির মতো সুস্পষ্টরূপে সত্যে পরিণত হতো। এক পর্যায়ে একাকী থাকা তার কাছে প্রিয় হয়ে ওঠে; তিনি হেরা গুহায় নির্জনে সময় কাটাতে থাকেন। আপন পরিবারের কাছে ফিরে আসার পূর্ব পর্যন্ত সেখানে তিনি একাধারে বেশ কয়েক রাত ইবাদতে মগ্ন থাকতেন। সঙ্গে নিয়ে যেতেন কিছু খাদ্য-সামগ্রী। তারপর তিনি খাদিজা রা.- তার কাছে ফিরে আসতেন এবং আরও কয়েকদিনের জন্য অনুরূপ খাদ্য- সামগ্রী সঙ্গে নিয়ে আবারও চলে যেতেন। একদিন তিনি হেরা গুহায় ইবাদতরত ছিলেন। হঠাৎ তার কাছে ফেরেশতার আগমন ঘটে। ফেরেশতা বলেন, ‘পড়ুন।’ নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উত্তর দেন, ‘আমি তো পড়তে জানি না।’ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘এ কথা বলার পর ফেরেশতা আমাকে জড়িয়ে ধরে খুব জোরে চাপ দেন, যাতে আমার খুব কষ্ট হয়।’

তারপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে আবারও বলেন, ‘পড়ুন।’ আমি আবারও উত্তর দিই, ‘আমি তো পড়তে পারি না।’ তারপর তিনি আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং দ্বিতীয়বারও এমন জোরে চাপ দেন যে, আমার খুবই কষ্ট হয়। ছেড়ে দিয়ে পুনরায় বলেন, ‘পড়ুন!’ আমি উত্তরে বলি, ‘আমি তো পড়তে পারি না।’ এরপর আবার আমাকে জড়িয়ে ধরেন এবং তৃতীয়বারও এমন জোরে চাপ দেন, যাতে আমার খুবই কষ্ট হয়। এরপর আমাকে ছেড়ে দিয়ে বলেন, ‘পড়ুন! আপনার প্রতিপালকের নামে, যিনি সৃষ্টি করেছেন। যিনি মানুষকে সৃষ্টি করেছেন আলাক হতে। পড়ুন! আর আপনার প্রতিপালক মহিমান্বিত, যিনি কলমের সাহায্যে শিক্ষা দিয়েছেন; শিক্ষা দিয়েছেন মানুষকে, যা সে জানত না।’

এরপর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এ ওহি নিয়ে ফিরে এলেন। তার কাঁধের পেশিগুলো কাঁপছিল। তিনি খাদিজা রা.-এর কাছে এসে বলেন, ‘আমাকে চাদর দিয়ে ঢেকে দাও, আমাকে চাদরাবৃত করো। খাদিজা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে চাদরাবৃত করে দিলে তিনি স্বাভাবিক হন। এরপর খাদিজার নিকট সবকিছু তুলে ধরে বলেন, ‘খাদিজা, আমার কী হলো? আমি আমার নিজের ব্যাপারে আশঙ্কাবোধ করছি।’ খাদিজা রা. তাকে অভয় দিয়ে বলেন, ‘না, কখনো তা হবে না; বরং সুসংবাদ গ্রহণ করুন। আল্লাহর কসম। তিনি কখনো আপনাকে অপমানিত করবেন না। আল্লাহর কসম! আপনি তো স্বজনদের খোঁজখবর রাখেন, সত্য কথা বলেন, দুঃখীদের দুঃখ নিবারণ করেন, দরিদ্রদের বাঁচার ব্যবস্থা করেন, অতিথির সেবা করেন এবং দুর্দশাগ্রস্তদের সাহায্য করেন।’

এরপর খাদিজা রা. রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নিজ চাচাতো ভাই ওয়ারাকা ইবনে নাওফেল ইবনে আসাদ ইবনে আবদুল উয্যার কাছে নিয়ে যান। ওয়ারাকা জাহেলি যুগে খ্রিষ্টধর্ম গ্রহণ করেছিলেন। একইসাথে ডিমে আরবি লিখতে জানতেন এবং ইনজিল কিতাবের আরবি অনুবাদ করতেন। তিনি ছিলেন বৃদ্ধ। দৃষ্টিশক্তি হয়ে গিয়েছিল লুপ্ত। খাদিজা রা. তাকে বলেন, ‘চাচাতো ভাই আমার, আপনার ভ্রাতুষ্পুত্র কী বলছে শুনুন তো।’ ওয়ারাকা ইবনে নাওফাল জানতে চান, ‘ভাতিজা, কী দেখেছিলেন?’ এ প্রশ্নের উত্তরে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যা দেখেছিলেন, একে-একে সবকিছু খুলে বলেন। সব শুনে ওয়ারাকা বলে ওঠেন, ‘এ তো সে-ই সংবাদবাহক, যাকে আল্লাহ তায়ালা মুসা আলাইহিস সালামের কাছে প্রেরণ করেছিলেন। হায়! আপনার জাতিগোষ্ঠী যখন আপনাকে দেশ থেকে বের করে দেবে, আমি যদি সেসময় যুবক থাকতাম, হায়! আমি যদি সেসময় জীবিত থাকতাম!’ এ কথা শুনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘সত্যি কি তারা আমাকে বের করে দেবে?’ ওয়ারাকা উত্তর দেন, ‘হ্যাঁ। যে ব্যক্তিই আপনার মতো নবুওয়াত ও রিসালাত নিয়ে আগমন করেছে, তার সঙ্গেই এরূপ দুশমনি করা হয়েছে। আর আমি যদি আপনার সে যুগ পাই, তবে অবশ্যই আপনাকে পূর্ণ সহযোগিতা করব।’ এর কিছুদিন পরেই ওয়ারাকা ইন্তেকাল করেন। ওহির ধারাও কিছুদিনের জন্য থেমে যায়।

তখন পর্যন্ত পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ হয়নি। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নফল পড়তেন। আম্মাজান খাদিজা রা.-ও হতেন তার সাথে শরিক। ইবনে সাদ লেখেন, ‘নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং খাদিজা রা. একটা সময় পর্যন্ত গোপনে নামাজ পড়েছেন। ‘

আফিফ কিনদি পণ্য ক্রয়ের জন্য মক্কা এসে আব্বাস রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। এক সকালে তিনি কাবার দিকে তাকিয়ে দেখতে পান, একজন যুবক এসে কাবাকে সামনে রেখে দাঁড়িয়ে গেছে, কিছুক্ষণ পর এক বালক এসে দাঁড়িয়েছে তার ডানে। এরও কিছুক্ষণ পর আরেক নারী দাঁড়িয়ে যান তাদের পেছনে। নামাজ পড়ে তারা চলে গেলে আফিফ কিনদি আব্বাসকে জিজ্ঞাসা করেন, ‘বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে মনে হয়।’ আব্বাস রা. বলেন, ‘হ্যাঁ। জানো, এই নওজোয়ান আমারই ভাতিজা মুহাম্মাদ। বালকটি আমার অপর ভাতিজা আলি এবং নারীমূর্তিটি মুহাম্মাদেরই সহধর্মিণী। আমার ভাতিজা মনে করে, তার ধর্ম বিশ্বজাহানের প্রতিপালকের ধর্ম। সে যা কিছু করে তারই হুকুমে করে। আমার জানামতে পৃথিবীতে এ মতের অনুসারী কেবল এ তিনজনই।

উকাইলি এ বর্ণনাটিকে জয়িফ মনে করলেও আমাদের নিকট এটি জয়িফ হওয়ার কোনো কারণ নেই। বর্ণনা হিসেবে এতে কোনো ত্রুটিও আমরা দেখি না। কারণ, এর প্রমাণ পাওয়া যায় বিভিন্ন সনদে। মুহাদ্দিস ইবনে সাদ বর্ণনাটি উল্লেখ করেছেন। বাগাবি, আবু ইয়ালা এবং নাসায়িও বর্ণনাটিকে স্থান দিয়েছেন স্ব-স্ব গ্রন্থে। হাকিম, ইবনে খাইসামা, ইবনে মানদাহ এবং গায়লানিয়াতের গ্রন্থকারও বর্ণনাটি গ্রহণ করেছেন। তা ছাড়া সবচেয়ে বড় বিষয় হলো, এই বর্ণনাটিকে ইমাম বুখারি রহ. তার ইতিহাসগ্রন্থে সন্নিবেশিত করে সহিহ হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন।

খাদিজা রা. শুধু রাসুলের নবুওয়াতকেই সত্যায়ন করেননি; বরং শুরু থেকেই নিজেকে তার অন্যতম সাহায্যকারী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। দীর্ঘ কয়েকটি বছর কাফেররা যখন তাকে নির্মম নির্যাতন করেছিল, আম্মাজান খাদিজা রা.-ই তার মাথায় বুলিয়েছিলেন সান্ত্বনার পরশ। ইতিপূর্বে তো আমরা বলে এসেছি, সূচনাতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মুখ থেকে যখন উচ্চারিত হয়েছিল, ‘নিজের ব্যাপারে আমার ভয় হচ্ছে।’ আম্মাজান খাদিজা রা. তখন তাকে অভয় দিয়ে বলেছিলেন, ‘বিচলিত হবেন না; আল্লাহ আপনাকে একা ছেড়ে দেবেন না।’

ইসলামের দাওয়াত দেওয়ার কারণে মুশরিকরা যখন নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নানামুখী কষ্ট দিয়েছিল, আম্মাজান খাদিজা রা. তাকে বিভিন্নভাবে সান্ত্বনা দিয়েছিলেন। ইসতিআব গ্রন্থে বর্ণিত হয়েছে, ‘মুশরিকদের বাধা অথবা মিথ্যার তকমা দেওয়াতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখনই কোনো কষ্ট পেতেন, আম্মাজান খাদিজা রা.- এর কাছে গেলে নিমিষেই তার হৃদয়ে শীতলতা ছেয়ে যেত; কারণ, তিনি নবীজির কথার সত্যায়ন করতেন, মুশরিকদের আচরণগুলো নবীজির সামনে খুব তুচ্ছ হিসেবে উপস্থাপন করার চেষ্টা করতেন। ‘

নবুওয়াতের সপ্তম বছর কুরাইশরা যখন ইসলামের নিশানা মুছে ফেলতে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তার গোত্রের সকলকে অবরুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নেয়, এরই পরিপ্রেক্ষিতে অবরুদ্ধ হয়ে যায় আবু তালেবসহ তার গোটা খান্দান: খাদিজা রা.-ও নির্দ্বিধায় বেছে নেন প্রিয়তম স্বামীর পথ। ‘খাদিজা রা.-ও নবীজির সাথে তালিবের উপত্যকায় অবরুদ্ধ হয়েছিলেন। ‘

বনু হাশেম তিনটি বছর অবরুদ্ধ থাকে ওই উপত্যকায়। এতটা কঠিন ছিল সেসময়, ক্ষুধা নিবারণের জন্য তাদেরকে গাছের পাতা পর্যন্ত খেতে হয়েছিল।
তবে আম্মাজান খাদিজা রা.-এর ওসিলায় মাঝে মাঝে সেখানে কিছু খাবার পৌঁছাত। একদিন তার ভাতিজা হাকিম ইবনে হিজাম সামান্য কিছু গম তার গোলামের মাধ্যমে খাদিজা রা.-এর কাছে পাঠান। পথিমধ্যে আবু জাহেল দেখে ফেলে। গমগুলো সে ছিনিয়ে নিতে চায়। ঘটনাক্রমে আবুল বুখতারি সেদিক দিয়েই যাচ্ছিলেন। কাফের হলেও তার হৃদয়ে দয়ার উদ্রেক হয়। আবু জাহেলকে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘এক ব্যক্তি তার ফুফুর নিকট কিছু খাবার পাঠাচ্ছে, তুমি বাধা দিচ্ছ কেন?’

ইন্তেকাল
রাসুলের সঙ্গে বিবাহের পর আম্মাজান খাদিজা রা. বেঁচে ছিলেন পঁচিশ বছর। নবুওয়াতের দশম বছর মোতাবেক, হিজরতের তিন বছর পূর্বে রমজান মাসের দশ তারিখে তিনি পৃথিবীকে বিদায় জানান; ৬৪ বছর ০৬ মাস বয়সে সাড়া দেন রবের ডাকে। তখন পর্যন্ত জানাজার বিধান প্রবর্তিত না হওয়ায় বিনা জানাজাতেই তাকে সমাহিত করা হয়। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজেই তার কবরে নেমে প্রিয়তমাকে তার রবের হাতে সঁপে দেন। খাদিজা রা.-এর সমাধিটি হিজুন নামক স্থানে। আজ অবধি তা মুসলিমরা শ্রদ্ধাভরে জিয়ারত করে।

আম্মাজান খাদিজা রা.-এর ইন্তেকালের মাধ্যমে শুরু হয়েছিল ইসলামের ইতিহাসের নতুন একটি অধ্যায়। আঁধার ধেয়ে এসেছিল চতুর্দিক থেকে। নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম শেষপর্যন্ত বছরটিকে নামকরণ করেছিলেন আমুল হুজন তথা দুঃখের বছর হিসেবে। কারণ আম্মিজানের ইন্তেকালের পর নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অভয় দেওয়ার মতো তেমন কেউ ছিল না। পরোয়া করার মতো কেউ না থাকায় কুরাইশরাও অত্যন্ত নির্দয়ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়েছিল নবীজির উপর। ওই বছরই মক্কাবাসীর দীন কবুলের ব্যাপারে হতাশ হয়ে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তায়েফে গিয়েছিলেন।

নবীজির স্ত্রীদের মধ্যে আম্মাজান খাদিজা রা.-এর বিশেষ কিছু বৈশিষ্ট্য ছিল। তিনি ছিলেন নবীজির প্রথম প্রিয়তমা। বিবাহের সময় তাঁর বয়স চল্লিশ বছর হলেও নবীজি তার বর্তমানে দ্বিতীয় কোনো বিবাহ করেননি। ইবরাহিম ব্যতীত নবীজির সকল সন্তান একমাত্র তার গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছে।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নবুওয়াতের দায়িত্ব পালনে নবোদিত হলে প্রথম দিকে পৃথিবীর কেউ তার ডাকে সাড়া দেয়নি। হেরা পর্বত, আরাফাহ কিংবা ফারান উপত্যকা; মোটকথা সমগ্র জাজিরাতুল আরব পালন করেছিল নীরব ভূমিকা। কবরসম নীরবতার মাঝে শুধু একটি আওয়াজ লাব্বাইক বলেছিল। একটি মাত্র শব্দের গুঞ্জন উঠেছিল। একটি মাত্র মুখ রাসুলের দিকে তাকিয়ে বলেছিল, হে রাসূল আমি আপনাকে আল্লাহর প্রেরিত দূত বলে বিশ্বাস করি। প্রিয় পাঠক, যার হৃদয়ের গহিন থেকে উৎসারিত হয়েছিল এ গুঞ্জন, আঁধার পৃথিবীতে যার হৃদয়ে প্রোজ্জ্বলিত হয়েছিল তাওহিদের আলো, তিনিই আমাদের আম্মাজান খাদিজা রা.। এই উম্মাহর মধ্যে তার মর্যাদা কতটুকু, শুধু এ কথাটুকু দ্বারাই তা আন্দাজ করা যায়।

তিনিই সে সম্মানিত নারী, নবীজির নবুওয়াত লাভের পূর্বেই যিনি মূর্তিপূজা ছেড়ে দিয়েছিলেন। মুসনাদে আহমাদে বর্ণিত হয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার আম্মাজান এর সামনে বলেন, ‘আল্লাহ, আমি কখনোই লাত ও উজযার পূজা করব না।’ আম্মাজান খাদিজা রা. বলেন, ‘ছাড়ুন তো, তাদের নামও মুখে আনবেন না। ‘

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যখন মানুষকে তার রিসালাতের প্রতি আহ্বান জানান, সর্বপ্রথম তিনিই লাব্বাইক বলে সাড়া দিয়েছিলেন। তার মাধ্যমে ইসলাম ও রাসুলের পবিত্র সত্তা যে শক্তি পেয়েছে, সিরাতের কিতাবগুলোতে রয়েছে তার পূর্ণ বিবরণ। ইবনে হিশামে রয়েছে, ‘ইসলামের ব্যাপারে তিনি ছিলেন রাসুলের অন্যতম সাহায্যকারী।’

রাসূলকে তিনি কতটা ভালোবাসতেন, সেটা বলার অপেক্ষা রাখে না। তিনি তার সমূহ সম্পদ অর্পণ করেছিলেন রাসুলের হাতে-ইসলামের খেদমতে। এত সম্পদ থাকার পরও তিনি নিজেই রাসুলের খেদমত করতেন; যা থেকে রাসুলের প্রতি তার ভালোবাসার ব্যাপ্তি সহজেই অনুমেয়। সহিহ বুখারিতে বর্ণিত হয়েছে, একবার জিবরিল এসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন, ‘খাদিজা পাত্রে করে কিছু আনছে, আপনি তাকে আল্লাহ এবং আমার পক্ষ থেকে সালাম পৌঁছে দেবেন।’

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জায়েদ ইবনে হারিসা রা.-কে খুব ভালোবাসতেন। কিন্তু জায়েদ রা. তো ছিলেন ক্রীতদাস। শেষপর্যায় আম্মাজান খাদিজা রা. তাকে আজাদ করে দেন। জায়েদ রা. আর দুনিয়ার কোনো মনিবের গোলাম থাকে না; হয়ে যায় দোজাহানের বাদশাহ নবী মুহাম্মাদের একান্ত অনুগত দাস।

নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামও আম্মাজান খাদিজা রা.-কে খুব ভালোবাসতেন। তার বর্তমানে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বিতীয় কোনো বিবাহ করেননি। খাদিজা রা.-এর ইন্তেকালের পর যখনই নবীজি কোনো পশু জবাই করতেন, খুঁজে-খুঁজে গোশতের কিছু অংশ পাঠিয়ে দিতেন তার বান্ধবীদের কাছে। এটা তার অভ্যাসে পরিণত হয়েছিল। এ ভালোবাসা কতটা মহান, কতটা সুবিশাল; তা ভাষায় ফুটিয়ে তোলা সত্যিই অসম্ভব।

আম্মাজান আয়েশা রা. বলতেন, ‘আমি খাদিজাকে দেখিনি ঠিক; কিন্তু অন্যদের তুলনায় তার উপরেই আমার বেশি ঈর্ষা হতো। কারণ নবীজি সর্বদাই তার আলোচনা করতেন। একবার এ নিয়ে কিছুটা তির্যক মন্তব্য করলে নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাকে বলেছিলেন, ‘তার প্রতি ভালোবাসা আল্লাহ-ই আমার হৃদয়ে ঢেলে দিয়েছেন। ‘

খাদিজার ইন্তেকালের পর একবার তার বোন হালাহ নবীজির সাথে দেখা করতে যান। ঘরে প্রবেশের অনুমতি প্রার্থনা করেন। তার কণ্ঠ ছিল অনেকটাই খাদিজার মতো। এ আওয়াজ কানে পড়তেই নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চকিত হন। স্মরণ হয়ে যায় খাদিজার কথা। স্মৃতিগুলো হাতছানি দিতে শুরু করে। সংবিৎ ফিরতেই প্রকৃতিস্থ হয়ে বলেন, ‘আল্লাহ! এ তো হালাহ এসেছে।’ আম্মাজান আয়েশা রা.-ও সেখানে ছিলেন। এ দৃশ্য দেখে তিনি ঈর্ষান্বিত হয়ে বলে ওঠেন, ‘এমন নারীর কথা স্মরণ করছেন, যে কিনা আরও আগেই মারা গিয়েছে। আল্লাহ তো আপনাকে তার চেয়েও ভালো স্ত্রী দিয়েছেন!’

সহিহ বুখারির বর্ণনা এতটুকুই। তবে ইসতিআবে রয়েছে, আম্মাজান আয়েশা রা.-এর এ কথার উত্তরেও নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন তাকে স্মরণ করছি। কারণ, যখন সবাই আমাকে প্রত্যাখ্যান করেছে “হ্যাঁ, সে-ই আমাকে সত্যায়ন করেছে। সবাই যখন কুফরি অবলম্বন করেছে, সে-ই গ্রহণ করেছে তাওহিদের দাওয়াত। যখন আমার কোনো সাহায্যকারী ছিল না, সে-ই আমার পাশে দাঁড়িয়েছে। আমার সন্তানরা তো তার গর্ভ থেকেই জন্ম নিয়েছে।” আম্মাজান খাদিজা রা.-এর মর্যাদা সম্পর্কে অনেক হাদিস বর্ণিত হয়েছে। বুখারি ও মুসলিমে রয়েছে, রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন:
خَيْرُ نِسَاءِهَا مَرْيَمُ بنْتِ عِمْرَانَ وخيرُ نِساءِها خَدِيْجَةُ بنتِ خُوَيْلِد
তার মাঝে শ্রেষ্ঠ নারী হলেন মারইয়াম বিনতে ইমরান। আর তার মাঝে শ্রেষ্ঠ নারী হলো খাদিজা বিনতে খুয়াইলিদ।
জিবরিল আলাইহিস সালাম একবার নবীজির পাশে বসা ছিলেন। এমন সময় খাদিজা রা. এলে তিনি নবীজি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলেন:
بَشِّرُوا خَدِيجَةَ بِبَيْتٍ مِنَ الجَنَّةِ مِنْ قَصَبٍ، لَا صَخَبَ فِيهِ، وَلَا نَصَبَ
‘খাদিজাকে জান্নাতে মুক্তানির্মিত এমন এক প্রশস্ত ঘরের সুসংবাদ দিন, যেখানে কোনো হট্টগোল আর কষ্ট থাকবে না।’

লেখক :
মুহাম্মাদ মাহবুবুল ইসলাম মজুমদার
শিক্ষাবিদ, পিএইচডি গবেষক (চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়)

কনভেনশন গ্রন্থ ২০২৫ থেকে

Scroll to Top

সদস্য হতে ফরমটি পূরণ করুন


ইসলামী যুব আন্দোলন-এ যোগদান করতে চাইলে এই ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন।

প্রশ্ন করুন…

ইসলামী যুব আন্দোলন সম্পর্কে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

যোগাযোগ তথ্য

সদস্য ডাটা এন্ট্রি

শাখা কর্তৃক নবাগত সদস্যদের নিন্মোক্ত ফরমের মাধ্যমে পূরণ করে পাঠাতে হবে

বর্তমান ঠিকানা
স্থায়ী ঠিকানা