কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

কেন্দ্রীয় কার্যালয়

৫৫/বি (৩য় তলা), পুরানা পল্টন, ঢাকা- ১০০০

ফোন

০২-৫৫৭১৪১

ইমেইল

iajbd.2016@gmail.com

মক্কার নিপীড়িত সাহাবী হযরত ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ রা.

তাঁর নাম ওয়ালীদ। পিতার নামও ওয়ালীদ। মাতার নাম সাখরাহ বিনতে হারেস। তার পিতা ওয়ালীদ ইবনে মুগীরা ছিলেন প্রভাবশালী কুরাইশ নেতা। মক্কার ধনী ব্যক্তিদের মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম। বিশিষ্ট তাবে’য়ী হযরত মুজাহিদ রহ. এর বর্ণনা মতে ওয়ালীদ ইবনে মুগীরার ১০ ছেলে আর সা’ঈদ ইবনে জুবাইর রহ. এর মতে ১৩ ছেলে। এদের মধ্যে কেবল তিন জন ইসলাম গ্রহন করেছেন। তাঁরা হলেন, ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ রা., খালিদ ইবনে ওয়ালীদ রা. ও হিশাম ইবনে ওয়ালীদ রা.। (তাফসীরে জালালাইন: ২৮০পৃ. টীকা: ১১)

বদর যুদ্ধে মুসলমানদের হাতে বন্দী
হযরত ওয়ালীদ রা. বদর যুদ্ধে কাফিরদের প¶ে মুসলমানদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন। তাতে মুসলমানদের হাতে বন্দী হয়ে যান। আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রা. তাঁকে বন্দী করেন। বদরের বন্দীদেরকে মুক্তিপণের বিনিময়ে ছেড়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হলে, তাঁকে মুক্ত করার জন্য এগিয়ে আসে তাঁর দুই ভাই হিশাম ও খালিদ। দু’জনের মধ্যে হিশাম হল তার সহোদর। হযরত আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ রা. তাঁর মুক্তিপণ স্বরূপ চার হাজার দিরহাম দাবি করেন। এত মোটা অংকের অর্থ প্রদানে খালিদ প্রথমে অসম্মতি প্রকাশ করে। তখন হিশাম রাগতঃস্বরে তাকে বলল, সে তো তোমার (আপন) ভাই নয়; ভাই তো আমার। তোমার নিকট ভাইয়ের চেয়ে দিরহামের গুরুত্ব বেশি হয়ে গেল? আব্দুল্লাহ্ ইবনে জাহাশ যদি এর চেয়েও বেশি অংক দাবি করে, তবুও আমি তাকে মুক্ত করে ছাড়ব। তুমি শরীক হও বা না হও। অবশেষে খালিদ বিন ওয়ালীদ একমত হয়ে গেল। তারা চার হাজার দিরহামের বিনিময়ে ভাই ওয়ালীদকে মুক্ত করে মক্কার উদ্দেশ্যে রওয়ানা হল। অপর এক বর্ণনামতে রাসূল সা. ওয়ালীদের মুক্তিপণে তার পিতার যুদ্ধাস্ত্র ও লৌহবর্ম দাবি করেন, যার মূল্য ছিল একশ’ দীনার। তারা সে দাবি পূরণ করে ভাইকে মুক্ত করে।

ইসলাম গ্রহণ ও বন্দীজীবন
মুক্তিপণ আদায়ের পর হযরত ওয়ালীদ রা. ভাইদের সাথে মক্কার উদ্দেশে রওয়ানা করেন। পথিমধ্যে জুলহুলাইফা নামক স্থান থেকে আবার মদিনায় ফিরে আসেন এবং ইসলামের ঘোষণা দিলেন। ভাইয়েরা তাঁকে জিজ্ঞেস করল, তুমি যেহেতু ইসলাম কবুলের সিদ্ধান্ত নিয়েছো তাহলে মুক্তিপণ আদায়ের পূর্বেই ইসলামের ঘোষণা দিলে না কেন? তাহলে তো আমাদের পিতার স্মৃতিচিহ্নগুলো খোয়াতে হতনা। তিনি বললেন, মক্কার লোকেরা এ কথা যেন বলতে না পারে যে, আমি মুক্তিপণ আদায়ের ভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছি। মূলত আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি সম্পূর্ণ একনিষ্ঠতার সাথে, ইসলামের সৌন্দর্যে মুগ্ধ ও প্রভাবিত হয়ে।

ইসলাম গ্রহণের পর তিনি ভাইদের সঙ্গে মক্কায় চলে গেলেন। পথিমধ্যে তারা ভাইয়ের সাথে এ বিষয়ে কোনো বাড়াবাড়ি করল না। মক্কায় আসার পর তারা ভাইয়ের প্রতি হয়ে গেল চরম নিষ্ঠুর। ভ্রাতৃত্ববোধ সব ভুলে গিয়ে তাঁকে নি¶েপ করল বন্দীশালায়, যেখানে নিষ্পেষিত হচ্ছেন হযরত ‘আয়্যাশ ইবনে আবু রাবী’আহ রা. ও সালামাহ্ ইবনে হিশাম। নির্মম ও নিষ্ঠুর আচরণ করতে থাকে তারা বন্দীদের সাথে। নতুন নতুন পদ্ধতিতে ও অমানবিক কায়দায় চলতে থাকে নির্যাতন। নিষ্ঠুরতা এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, স্বয়ং রাসূল সা. অপরাপর মজলুম মুসলমানদের সাথে হযরত ওয়ালীদ রা.-এর নামও কুনুতে নাযিলার দু’আর মধ্যে শামিল করেন।

বন্দীশালা থেকে মুক্তি
বেশ কিছুকাল নির্যাতন ভোগের পর হযরত ওয়ালীদ রা. এক সুযোগে যিন্দানখানা থেকে পালিয়ে চলে আসেন মদীনায়। রাসূল সা. তাঁর কাছে হযরত ‘আয়্যাশ রা. ও সালামাহ্ রা. এর অবস্থা জিজ্ঞেস করলেন। ওয়ালীদ রা. বললেন, তাদের উপর নির্যাতন চালানো হচ্ছে। একটি বেড়ি দু’জনের পায়ে লাগানো হয়েছে। রাসূল সা. হযরত ওয়ালীদকে নির্দেশ করলেন, তুমি আবার মক্কায় ফিরে যাও। অমুক কামার খাঁটি মুসলমান। তুমি তার কাছে গিয়ে উঠবে। অতঃপর অতি গোপনে ‘আয়্যাশ ও সালামার খবর নিয়ে তাদের কাছে পৌঁছবে। তাদেরকে বলবে, তুমি আমার প্রতিনিধি। তারা যেন তোমার সাথে বেরিয়ে আসে। আল্লাহ্ তোমাদের সাহায্য করবেন। ওয়ালীদ রা. রাসূল সা. এর নির্দেশ মতো মক্কার সে কামারের কাছে গিয়ে উঠলেন। কিছু দিন তার আশ্রয়ে থেকে গোপনে গোপনে সংবাদ সংগ্রহ করতে লাগলেন। জানতে পারলেন তাদেরকে ছাদবিহীন একটি ঘরে বন্দী করে রাখা হয়েছে। তিনি সিদ্ধান্ত করলেন যেকোনো ভাবেই হোক কুরাইশদের চোখ ফাঁকি দিয়ে সেখানে ঢুকবেন এবং মাজলুম ভাইদের মুক্ত করবেন। অতপর হযরত ওয়ালীদ সুযোগ বুঝে রাতের অন্ধকারে দেয়াল টপকে ভেতরে ঢুকলেন। তাঁকে দেখে হযরত ‘আয়্যাশ ইবনে রাবিয়া (রা.) ও সালামা ইবনে হিশাম আশ্চার্যান্তিত হয়ে বললেন, ওয়ালীদ তুমি এ জেলখানায় আবার কেন আসলে? হযরত ওয়ালীদ তাদেরকে রাসূল সা. এর নির্দেশনা কোনোালেন এবং বন্দিশালা থেকে বের হওয়ার উপায় খুঁজতে বললেন। তিন জনে মিলে পালানোর পরিকল্পনা সম্পন্ন করলেন। হযরত ওয়ালীদ রা. পাথর ও তরবারির সাহায্যে তাদের পায়ের বেড়ী কাটলেন। অতঃপর তাদেরকে নিজের উটের উপর উঠিয়ে দ্রুত মদিনার পথে চললেন। মুহূর্তে খবরটি মক্কায় ছড়িয়ে পড়লে কাফেররা খালিদ ইবনে ওয়ালীদের নেতৃত্বে কুরাইশের একদল যুবককে তাদের পিছু ধাওয়া করতে পাঠাল। খালিদ ইবনে ওয়ালীদ অনেক চেষ্টা করলেন ওয়ালীদ ও তার সাথীদের ধরার জন্য কিন্তু কোনো কাজ হল না। হযরত ওয়ালীদ রা. তাঁর সাথীদ্বয়কে নিয়ে সোজা রাসূল সা. এর খেদমতে উপস্থিত হলেন। পথিমধ্যে এক জায়গায় পড়ে গিয়ে তাঁর একটি আঙ্গুল মারাত্মকভাবে আহত হয় এবং তা থেকে রক্ত ঝরতে থাকে। তখন তিনি আহত আঙ্গুলকে সম্বোধন করে একটি শ্লোক আওড়াতে থাকেন।
শ্লোকটি এই-
‬‎‬‎‫هَلْ أَنْتِ إِلَّا إِصْبَعُ دَمِيْتِ* ‬‎‬ وَفِي سَبِيلِ اللَّهِ مَا لَقِيْتِ‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬‬
“তুমি তো একটি আঙ্গুল ছাড়া আর কিছুই নও, যা থেকে রক্ত ঝরছে; যা কিছু লাভ করেছ, সবই আল্লাহর পথে (অর্থাৎ সবই আল্লাহর জন্য)।”

উমরাতুল কাযায় অংশগ্রহণ ও ভাইয়ের নিকট দাওয়াতী চিঠি
৭ম হিজরীতে নবীজি সা. উমরাতুল কাযা পালনের জন্য রাওয়ানা করলে হযরত ওয়ালীদ রা.ও সে সময় রাসূল সা. এর সঙ্গে ছিলেন। তখনও তাঁর ভাই খালিদ ইবনে ওয়ালীদ ইসলাম গ্রহণ করেনি। মুসলমানদের নজরে যেন না পড়েন, সেজন্য তিনি আত্মগোপন করেন। রাসূল সা. ওয়ালীদকে তার ভাইয়ের কথা জিজ্ঞেস করলেন এবং বললেন যদি খালেদ আমার নিকট আসে তাহলে আমি তাকে যথাযথ মূল্যায়ন করব। নবীজি সা. আরও বললেন আমার অবাক লাগে তার মত জ্ঞানী ও বিচক্ষণ মানুষ এখনও পর্যন্ত ইসলামের সত্যতা অনুধাবন করতে পারল না! হযরত ওয়ালীদ রা. ভাইকে অনেক খোজাখুজি করেন। অবশেষে তিনি তাঁর কোনো সন্ধান না পেয়ে তার নিকট একটি চিঠি লিখলেন। চিঠিতে রাসূল সা. তাঁকে স্মরণ করার কথা উল্লেখ করে তাঁকে জোরালোভাবে দাওয়াত দিলেন। ভাইয়ের চিঠি পেয়ে খালিদ ইসলামের প্রতি অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়লেন। মাত্র ২/৩ মাসের মাথায় ৮ম হিজরীর সফর মাসে রাসূল সা.-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে হযরত খালিদ রা. ইসলাম গ্রহণ করলেন।

ইন্তিকাল
হযরত ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ রা. ঠিক কোনো মাসের কত তারিখে ইন্তিকাল করেছেন, তা পরিষ্কারভাবে সীরাতগ্রন্থসমূহে পাওয়া যায় না। কোনো কোনো বর্ণনায় দেখা যায় হযরত ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ রা.’আয়্যাশ ইবনে রাবিয়া (রা.) ও সালামা ইবনে হিশামকে কাফেরদের বন্দীশালা থেকে মুক্ত করে মদিনায় আসার পথে অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং পথিমধ্যেই তিনি ইন্তিকাল করেন। তবে আল্লামা ইবনে আবদিল বারসহ জীবনীবিশেষজ্ঞগণ মনে করেন এ মতটি সঠিক নয়, কারণ তিনি রাসূল সা. এর সাথে ওমরাতুল কাযায় অংশগ্রহণ করেছেন মর্মে একাধিক সূত্রে জানা যায়। অতএব নিশ্চিতভাবে একথা বলা যায় যে হযরত ওয়ালীদ ইবনে ওয়ালীদ রা. ৭ম হিজরীর পরে কোনো একসময় ইন্তিকাল করেছেন এই মতটি অনেকটা নির্ভরযোগ্য।

তথ্যসূত্র
১. উসদুল গাবাহ্ ৪/৬৭৮ পৃ.
২. আল-ইসতী’আব ৪/১৫৫৮ পৃ., ক্র. ২৭২৪
৩. আস-সীরাতুল হালাবিয়্যাহ ২/২৬৮ পৃ.
৪. আত-ত্ববাক্বাতুল কুবরা ৪/৯৭-৯৯ পৃ.
৫. আনসাবুল আশরাফ ১/২০৯-২১০ পৃ.
৬. সিরাতু ইবনে হিশাম ১/৪৭৬ পৃ.

লেখক :
মাওলানা আব্দুর রাজ্জাক
শায়খুল হাদীস, লেখক, গবেষক ও রাষ্ট্রচিন্তক

কনভেনশন গ্রন্থ ২০২৫ থেকে

Scroll to Top

সদস্য হতে ফরমটি পূরণ করুন


ইসলামী যুব আন্দোলন-এ যোগদান করতে চাইলে এই ফরমটি পূরণ করে পাঠিয়ে দিন।

প্রশ্ন করুন…

ইসলামী যুব আন্দোলন সম্পর্কে যদি আপনার কোনো প্রশ্ন থাকে, তাহলে আমাদেরকে জানাতে পারেন।

যোগাযোগ তথ্য

সদস্য ডাটা এন্ট্রি

শাখা কর্তৃক নবাগত সদস্যদের নিন্মোক্ত ফরমের মাধ্যমে পূরণ করে পাঠাতে হবে

বর্তমান ঠিকানা
স্থায়ী ঠিকানা